বুধবার ০১ মে ২০২৪
Online Edition

রোহিঙ্গা মুসলিম হত্যার প্রতিবাদ  বিক্ষোভে উত্তাল বাংলাদেশ

স্টাফ রিপোর্টার : মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলমানদের নিিির্বচারে হত্যা ও নির্যাতনের প্রতিবাদে বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ। গতকাল শুক্রবার বাদ জুমা জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমসহ বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এসব বিক্ষোভ থেকে অবিলম্বে রোহিঙ্গা হত্যা বন্ধ করার দাবি জানানো হয়।

রোহিঙ্গা হত্যা ও নির্যাতন বন্ধের দাবিতে তৌহিদী জনতা ঢাকা মহানগরী উত্তরের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়। বাদ জুমা বিভিন্ন মসজিদ থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের হলে হাজার হাজার ধর্মপ্রাণ মুসলমান অংশ গ্রহণ করেন এবং রোহিঙ্গা হত্যা বন্ধের দাবি জানান।

রাজধানী উত্তরার ৭নং সেক্টরে বাদ জুমা তৌহিদী জনতা এক বিশাল বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের আয়োজন করে। বিক্ষোভ মিলিলে নেতৃত্ব দেন অধ্যাপক ইবনে কারীম আহমদ মিঠু। উপস্থিত ছিলেন মাওলানা আতিকুর রহমান, ডা. আবু তাহের, আব্দুল্লাহ রেজা, মাওলানা এম আলম মুকুল, মাওলানা মাহ্বুব ফেরদৌসী, মেসবাহ উদ্দীন নাঈম, মনির হোসাইন, মাওলানা রুহুল আমীন, মাওলানা মুস্তাকিম আলম, এ্যাডভোকেট মোহাম্মদ ঈসা, ইব্রাহিম খলিল ও অধ্যক্ষ এনামুল হক সহ হাজার হাজার মুসল্লী।

সমাবেশে অধ্যাপক ইবনে কারীম আহমদ মিঠু বলেন, মিয়ানমার সরকার ও বৌদ্ধ জঙ্গীরা নির্বিচারে মুসলিম নিধন করলেও জাতিসংঘসহ বিশ^ সংস্থারগুলোর নিরবতা রহস্যজনক। তাই রোহিঙ্গা মুসলমানদের রক্ষায় মুসলমানদেরকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। তিনি রোহিঙ্গা মুসলমানদের হত্যার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ এবং অবিলম্বে এই নারকীয় হত্যা বন্ধের আহ্বান জানান। 

এছাড়াও উত্তরা আজমপুর কেন্দ্রীয় মসজিদ হতে আরও একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়ে সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়। সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন হাজার হাজার তৌহিদী জনতা।

বাদ জুমা মালিবাগ নূর মসজিদ হতে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়ে সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়। মিছিলটি নগরীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। উপস্থিত ছিলেন মাওলানা হাবিবুর রহমান, এস এ রহমান, খন্দকার রুহুল আমীন, আখতার হোসাইন ও মাওলানা শামীম হোসাইন প্রমুখ।

বাদ জুমা ভাটারা থেকে স্থানীয় মুসল্লীরা একটি বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে অংশ নেয়। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন আব্দুল কাইয়ুম মজুমদার। উপস্থিতি ছিলেন সর্বস্তরের মুসল্লীবৃন্দ।

খেলাফত আন্দোলন

বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের আমীরে শরীয়ত মাওলানা শাহ আতাউল্লাহ ইবনে হাফেজ্জী হুজুর মিয়ানমারে অব্যাহত নিরীহ নিরাপরাধ রোহিঙ্গা মুসলিম গণহত্যার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তিনি বলেন, মিয়নমার সেনাবাহিনী মুসলিম অধ্যুষিত রাখাইন রাজ্যে হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করছে, গ্রামের পর গ্রাম, মসজিদ-মাদরাসা ও কুরআন-হাদিস আগুন দিয়ে জ¦ালিয়ে দিচ্ছে। মিয়ানমার সেনাবাহিনী কর্তৃক রোহিঙ্গা মুসলমানদের গণহত্যায় পৃথিবীর সকল মানুষ মর্মাহত ও ক্ষুব্ধ। তিনি অবিলম্বে এ বর্বর, নৃঃশংস গণহত্যা বন্ধের দাবি জানিয়ে বলেন, মিয়ানমারে নিরাপরাধ শিশু-বৃদ্ধসহ অসংখ নারী-পুরুষের লাশ নদীতে ভাসছে। কোন বিবেকবান মানুষ এবর্বরতাকে সমর্থন করতে পারেনা। যারা এ গণহত্যা ও সন্ত্রাসবাদের সমর্থন করে তারাও মানবতার দুশমন। রোহিঙ্গা মুসলমানদের রক্ষায় এ সন্ত্রাসী গণহত্যার বিরুদ্ধে বিশ^মুসলিম ঐক্যবদ্ধ হয়ে যুদ্ধ ঘোষণা করতে হবে।

গতকাল শুক্রবার বাদজুমা বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের উদ্যোগে রোহিঙ্গা মুসলিম গণহত্যা বন্ধের দাবীতে রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরস্থ জামিয়া নূরিয়া ইসলামিয়া থেকে বিক্ষোভ মিছিল পূর্ব সমাবেশে সভাপতির ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন। বিক্ষোভে সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন দলের নায়েবে আমীর মাওলানা মুজিবুর রহমান হামিদী, প্রচার সম্পাদক মুফতি সুলতান মহিউদ্দীন, মাওলানা সাইফুল ইসলাম সুনামগঞ্জী ও মাওলানা আব্দুস সালাম প্রমুখ।

মাওলানা মুজিবুর রহমান হামিদী রোহিঙ্গা মুসলিম রক্ষা এবং মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস বন্ধে বাধ্য করতে মিয়ানমার সরকারের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন এবং অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ করার জন্য জাতিসংঘ, ওআইসিসহ সকল মুসলিম রাষ্ট্র প্রধানদের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, নতজানু হয়ে এ হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করা যাবে না। বাংলাদেশসহ সকল মুসলিম দেশ থেকে মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কার করতে হবে। রোহিঙ্গা মুসলমানদের জন্য স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কর্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।

মুফতি সুলতান মহিউদ্দীন বলেন, রোহিঙ্গা মুসলমানদের উপর হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে এবং তাদের দেশান্তর করে মিয়ানমার সরকার জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সকল আইন ও মানবাধিকার লঙ্গন করছে। এ গণহত্যার নায়ক সুচির বিচার আর্ন্তজাতিক আদালতে করতে হবে। রোহিঙ্গা মুসলমানদের রক্ষায় সসস্ত্র জিহাদের বিকল্প নেই। সমাবেশ শেষে একটি বিশাল বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি কামরাঙ্গীরচরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে দোয়ার মাধ্যমে সমাপ্ত হয়।

খেলাফত মজলিস : খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের বলেছেন, মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলমানরা মানুষ। নাগরিক অধিকার সকল মানুষের মৌলিক অধিকার। কিন্তু মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গা মুসলমানদের নাগরিকত্ব ছিনিয়ে নিয়ে মানবতাবিরোধী অপরাধে লিপ্ত হয়েছে। রোহিঙ্গা মুসলমানদের বিরুদ্ধে গণহত্যা চালান হচ্ছে। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর এ জুলুম নির্যাতনে সায় দিচ্ছেন অং সান সুকি। এই সুকি কোনভাবেই শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পেতে পারে না। সুকির নোবেল কেড়ে নেয়া উচিত। আজকে লক্ষ লক্ষ রোহিঙ্গা মুসলমানরা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। এসব শরনার্থীদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হবে। মানবিক সহায়তা প্রদান করতে হবে। একই সাথে তারা যাতে আরাকানে ফিরে গিয়ে নিরাপদে বসবাস করতে পারে সেজন্যে কূটনৈতিক তৎপরতায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সম্পৃক্ত করতে হবে। জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে রোহিঙ্গাদের রক্ষা ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে আসতে হবে। মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলিম গণহত্যার প্রতিবাদে খেলাফত মজলিস ঢাকা মহানগরী আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

গতকাল শুক্রবার বাদ জুম্মা জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে হাউজ বিল্ডিংয়ের সামনে ঢাকা মহানগরী সভাপতি শেখ গোলাম আসগরের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মাওলানা আজীজুল হকের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য পেশ করেন খেলাফত সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আহমদ আলী কাসেমী, বায়তুলাল ও আইন বিষয়ক সম্পাদক এডভোকেট মোঃ মিজানুর রহমান, অফিস ও প্রচার সম্পাদক অধ্যাপক মো: আবদুল জলিল, ইসলামী ছাত্র মজলিসের কেন্দ্রীয় সভাপতি মুহাম্মদ আজীজুল হক, ঢাকা মহানগরীর সহসভাপতি ডাঃ রিফাত বিন মালিক, মোঃ জহিরুল ইসলাম, প্রকৌশলী আবদুল হাসিজ খসরু, ইলিয়াস আহমদ, হাজী নূর হোসেন, মুন্সী মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, হুমায়ুন কবীর আজাদ, মাওলানা ফারুক আহমদ, আলহাজ্ব হারুনূর রশীদ, আমীর আলী হাওলাদার, ডাঃ আবুল কামাল, এডভোকেট সৈয়দ মুহাম্মদ সানাউল্লাহ, মোঃ আবুল কালাম প্রমুখ। 

সভাপতির বক্তব্যে শেখ গোলাম আসগর বলেন, অবিলম্বে রোহিঙ্গা মুসলিম নিধন বন্ধ করতে হবে। রোহিঙ্গাদের নাগরিক অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে। আরাকানের মুসলমানদেরকে স্বাধীনভাবে বসবাস করার ব্যবস্থা করতে হবে। এ জন্যে বাংলাদেশে জনগণ মজলুম রোহিঙ্গাদের সাথে আছে।

সমাবেশের পূর্বে এক বিরাট বিক্ষোভ মিছিল জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেট থেকে শুরু হয়ে পুরানা পল্টন মোড় হয়ে হাউজ বিল্ডিংয়ের সামনে সমাবেশে মিলিত হয়।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ